ভালো স্মার্টফোন চেনার উপায় | একটি ভালো ফোনের বৈশিষ্ট্যসমূহ
বর্তমান যুগে স্মার্ট ফোনে আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ । কিন্তু বাজারের হাজারও ফোনের মধ্যে নিজের জন্যে ভাল একটি স্মার্ট ফোন খুঁজে বের করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। আর সে কারণেই আমি আজকের এই পোস্টে আপনাদের একটি ভালো স্মার্টফোন চেনার উপায়গুলি জানাব।
বাজারে বিভিন্ন কোম্পানি বিভিন্ন নামে অনেক স্মার্ট ফোন লঞ্চ করে থাকে। আর আমাদের বাংলাদেশে, ব্রান্ড এবং নন ব্রান্ড এর মোবাইলে কোন অভাব নেই। তবে আপনি যদি একটু সচেতন হন এবং আপনি যদি জানেন যে কীভাবে একটি ভাল স্মার্ট ফোন চেনা যায় তাহলো খুব সহজেই আপনার উপযুক্ত স্মার্টফোনটি খুঁজে পাবেন।
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা মনে করে যে কম দামি মোবাইল ফোনগুলো কখনই ভাল হয়না। কিন্তু এই কথাটি সম্পূর্ণভাবে একটি ভুল ধারনা । বর্তমানে আমাদের দেশের বাজারে এমন অনেক স্বল্প বাজেটের স্মার্ট ফোন আছে যেগুলো ব্যবহারকারীকে ভাল একটি অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম।
আমি এটা বলছিনা যে কম দামি ফোনগুলো আপনার কেনা উচিত বা বেশি দামি ফোনগুলো খারাপ হয়। আমি বলতে চাচ্ছি যে সেই ফোনটাই ভাল ফোন যেটা তার বাজেটের অন্যান্য ফোনের থেকে ভাল কিছু উপহার দেয়।
একটি ভালো ফোনের বৈশিষ্ট্যসমূহ
যদিও এটা বলা মুশকিল যে কোন নির্দিষ্ট মোবাইলটি আপনার জন্য ভাল । তবে এমন কিছু বিষয় যা জানলে আপনি যেকোনো জায়গায়, যেকোনো ব্রান্ড এর মোবাইল খুব সহজেই খুঁজে বের করতে পারবেন। নিম্নে বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলঃ
ডিজাইনঃ
হোক সেটা আপনার পছন্দের মোবাইল ফোন অথবা অন্ন কিছু, ডিজাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আপনি আপনার কষ্টের টাকা দিয়ে একটা ফোন কিনলেন কিন্তু দেখা গেল তার নকশাটাই আপনার পছন্দ হল না। সুতরাং আপনি আপনার পরবর্তী স্মার্ট ফোনটি কেনার সময় এর ডিজাইন এর দিকে বিশেষ নজর দিবেন।
বর্তমানে বাজেরে বিভিন্ন নকশার মোবাইল দেখতে পাওয়া যায় যেমন কোনাটা ওয়াটার ড্রপ নচ ডিসপ্লে আবার কনটা পাঞ্চ হোল কাট আউট এর সাথে আসে। আবার কোনও ফোনের ধারগুলো হয় চৌক আবার কোনাটার গোলাকার। সেই সাথে ক্যামেরার আবস্থান মোবাইল এর লুক এর উপর অনেক প্রভাব ফেলে।
ব্যাটারিঃ
অনেকেই ভাবতে পারেন যে প্রসেসর র্যাম বাদ দিয়ে এখনি কেন ব্যাটারির কথা বলছি। কিন্তু ব্যাপারটা হল আপনার ফোন যতই শক্তিশালী হোক না কেন এটাতে চার্জ না থাকলে এটা আপনার কোন উপকারেই আসবে না। আর নিশ্চয় আপনি ব্যাটারি অপচয় এর ভয়ে মোবাইল ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবেন না। তাই একটা ভাল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি যুক্ত মোবাইল কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ।
আপনি যদি একজন ভারি মোবাইল ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন এবং দিনের মধ্যভাগে মোবাইল চার্জে দিতে না চান তাহলে আপনাকে সর্বনিম্ন ৪৫০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার প্রতি ঘণ্টা ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ব্যাটারি যুক্ত মোবাইল ফোন কিনতে হবে। তবে আমি উপদেশ দেব যে আপনার মোবাইলটিতে একটি ৫৫০০ থেকে ৭৫০০ মিলি অ্যাম্পিয়ার প্রতি ঘণ্টা ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যাটারি থাকা উচিত।
ডিসপ্লেঃ
বর্তমানে স্মার্ট ফোনগুলোর দাম অনেকটাই ডিসপ্লে এর মান এবং সাইজ এর ওপর নির্ভর করে। বাজেরে বিভিন ধরনের ডিসপ্লে যুক্ত স্মার্ট ফোন পাওয়া যায় যেমন টিএফটি, এলসিডি, ওলেড, আইপিএস ইত্যাদি। শুধু ধরনই নয় বরং সাইজ এর দিক থেকেও আলাদা যেমন কোনোটা 5 ইঞ্চি ডিসপ্লে আবার কোনোটা 6.5 ইঞ্চি ডিসপ্লে।
আপনি যদি গেমার হন তাহলে একটি উচ্চ রিফ্রেশ রেট সম্পূর্ণ ডিসপ্লে যুক্ত মোবাইল কেনা উচিত। আর মুভি লভর হলে নুন্নতম ৪০০ নিট উজ্জ্বলতা সম্পূর্ণ ডিসপ্লে যুক্ত মোবাইল কেনা উচিত। সেই সাথে ডিসপ্লে এর কালার ইউনিটের দিকেও খেয়াল রাখবেন যাতে যথেষ্ট পরিষ্কার ছবি দেখতে পান।
প্রসেসরঃ
প্রসেসর মূলত একটি মোবাইলের মস্তিষ্ক। আর যে মোবাইলের মস্তিষ্ক যত ভাল হবে সে মোবাইল দিয়ে তত সহজেই এবং দ্রুততার সাথে কার্য সম্পাদন করা সম্ভব হবে। যেহেতু বর্তমানে মোবাইল শুধু কথা বলার যন্ত্র নয় বরং মোবাইল দিয়ে বর্তমানে নানাবিধ কাজ করা হয় যেমন গেম খেলা ইন্টারনেট ব্রাউজ করা ইত্যাদি তাই বর্তমান যুগে মোবাইল কিনতে গেলে অবশ্যই তার প্রসেসরের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বর্তমানে বাজেট ভেদে বিভিন্ন মোবাইল এ বিভিন্ন ধরনের প্রসেসর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আপনি যদি একজন সাধারণ মোবাইল বাবহারকারি হয়ে থাকেন যে মোবাইল দিয়ে টুকটাক কাজের পাশাপাশি একটু ভিডিও দেখেন তাহলে একটু মোটামুটি মানের প্রসেসর যুক্ত মোবাইল কিনলেই চলবে। আর যদি একজন গেমার হন তাহলে আপনার মোবাইলটিতে ৮ কোর বিশিষ্ট একটি প্রসেসর থাকতে হবে যার প্রধান কোরগুলোর ক্লক স্পিড হবে ন্যূনতম ২ গিগা হার্জ।
র্যামঃ
মোবাইলের র্যাম এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানেনা এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। দেখবেন যে বাক্তি মোবাইল সম্বন্ধে কিছুই জানে না সেও তার মোবাইল এ র্যাম এর পরিমাণটা একটু বেশি চায়। মূলত রাম এর কাজ হল আপানর মোবাইল এর চলতি অ্যাপগুলকে ধারণ করা। সুতরাং একটি বড় রাম যুক্ত মোবাইলে আপনি একসাথে অনেকগুলো অ্যাপ চালু রাখতে পারবেন।
সাধারণত আমাদের দেশের বাজারে যে সকল মোবাইল ফোন পাওয়া যাই তার রাম এর ধারণ ক্ষমতা 1-16GB এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তবে আপনি যদি একজন মোটামুটি মানের বাবহারকারি হয়ে থাকেন তাহলে আপনার একটি 3GB র্যাম সম্পূর্ণ মোবাইল কেনা উচিত ।
রোমঃ
আপনি যদি কখনে কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনার হার্ড ডিস্ক সম্বন্ধে ধারনা থাকার কথা। যেখানে হার্ডডিস্ককে মূলত একটি স্থায়ী মেমোরি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেখানে অপারেটিং সিস্টেম, আপ্লিকেশন, এবং অন্যান্য ফাইল রাখা হয়। ঠিক তেমনি মোবাইলের রোমও একই কাজ করে।
আপনি যদি কখনো স্টোরেজ সমস্যায় না ভুগতে চান তাহল একটি ৬৪ জিবি রোম সম্পন্ন মোবাইল কেনা উচিত। যদিও এখন আর আগের মত মোবাইলে অডিও বা ভিডিও ফাইল সংরক্ষণ করার প্রয়োজন পরে না । কারণ বর্তমানে সবকিছুই অনলাইনে পাওয়া যায়। তবে আপনি যখন দেখবেন যে স্টোরেজ স্বল্পতার কারণে আপনার পছন্দের অ্যাপ টি ব্যবহার করতে পারছেন না তখন কিন্তু পস্তাতে হবে।
অপারেটিং সিস্টেমঃ
আপনি যত টাকা দিয়েই একটি মোবাইল ফোন কিনেন না কেন তাতে যদি একটা লেটেস্ট অপারেটিং সিস্টেম এবং একটি অপ্টিমাইজড ইউ আই না থাকে তাহলে আপনার মোবাইলের পারফরম্যান্সে অনেক ঘাটতি দেখতে পাবেন।
তাই আপনি আপনার পরবর্তী মোবাইল ফোন কিনার সময় অবশ্যই খেয়াল করবেন যাতে সেই মোবাইল এর অপারেটিং সিস্টেমের ভার্সনটা যেন লেটেস্ট হয়। আর ইউ আই এর ব্যাপারে বলতে গেলে এটা ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত পছন্দ। সুতরাং আপনি যদি পারেন তাহলে কিছু সময় ব্যবহার করে দেখে নিতে পারেন।
শেষ কথা
পরিশেষে বলতে পারি যে আপনার বাজেট কোন ব্যাপার না আপনি যদি একটু দেখেশুনে কিনেন তাহলে অবশ্যই ভাল একটি মোবাইল সহজেই কিনতে পারবেন । তাছাড়া যখনই নতুন একটা মোবাইল কিনবেন চেষ্টা করবেন একটি ব্র্যান্ডের মোবাইল কেনার। কেননা নন ব্রান্ডের মোবাইলের দাম কম হলেও এগুলোর কাস্টমার সাপোর্ট খুবই খারাপ হয়ে থাকে।
আরেকটা বিষয় হল অল্প কয়েক টাকা বাচাতে গিয়ে কখনো পুরাতন মোবাইল কিনবেন না। কারণ পুরাতন মোবাইলে ওয়ারেন্টি থাকে না, আর একবার নষ্ট হলে পরবেন চরম বিপাকে।