ডিএনএস (DNS) কি? এবং ডিএনএস কিভাবে কাজ করে


বন্ধুরা আশা করি সবাই ভাল আছেন ! আজকের পোস্টে আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় ইন্টারনেট ব্যবহারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ডোমেইন নেম সিস্টেম অর্থাৎ ডিএনএস (DNS) সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব। 

বর্তমানে আমরা কমবেশি সকলেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকি এবং প্রতিনিয়ত প্রায়ই কোন না কোন ওয়েবসাইটে রিসিভ করতেই থাকি। তবে আমাদের ইন্টারনেটের বিভিন্ন ধরনের ওয়েবসাইট ভিজিট করা সম্ভব করে তোলার পেছনে যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে, তা হল ইন্টারনেট প্রটোকল।  

আরে ইন্টারনেট প্রটোকল এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে ডিএনএস অর্থাৎ ডোমেইন নেম সিস্টেম। সুতরাং আমরা যদি ইন্টারনেট সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করি তাহলে অবশ্যই আমাদের ডিএনএস সম্পর্কে জানতে হবে। 

ডিএনএস কি?

ডিএনএস পূর্ণরূপ হল (ডোমেইন নেম সিস্টেম) এবং এটি এমন একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ব্রাউজার একটি ডোমেইন এর সাথে সম্পর্কিত আইপি অ্যাড্রেস বের করে আনে। 

ডিএনএস ব্যবহার করে আমরা খুব সহজেই একটি ওয়েবসাইটের আইপি অ্যাড্রেস মনে না রেখেই শুধুমাত্র ডোমেইনটি  ব্রাউজারের এড্রেসবারে লিখে সেই কাঙ্খিত ওয়েবসাইটটিতে ভিজিট করতে পারি। 

অর্থাৎ সোজা কথায় বলতে গেলে ডিএনএস হলো এমন একটি প্রযুক্তি যা একটি ফোনবুকের মত কাজ করে থাকে। এবং এটি আমাদের হয়ে আমরা যে সকল ওয়েবসাইটে ভিজিট করি সেগুলো আইপি অ্যাড্রেস মনে রাখে। 

ইন্টারনেট ব্যবহারের ডিএনএস (DNS) কেন জরুরি?

বর্তমান সময়ে ডিএনএস ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব । তবে একেবারেই অসম্ভব এ কথাটা সত্য নয়। কেননা, একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটের আইপি অ্যাড্রেস ব্রাউজারের এড্রেসবারে লিখেও ডিএনএস সার্ভার ব্যবহার না করেই ইন্টারনেট ব্রাউজ করা সম্ভব। 

যাই হোক, ইন্টারনেট ব্যবহারের ডিএনএস কেন এবং কতটা জরুরি তা জানতে আমাদের ইন্টারনেটের শুরুর দিকে যেতে হবে এবং ডিএনএস এর ইতিহাস সম্বন্ধে জানতে হবে। কেননা ডিএনএস অর্থাৎ ডোমেইন নেম সিস্টেম এর উৎপত্তি সম্পর্কে জানলেই কেবল আমরা এর গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারব। 

ইন্টারনেটের শুরুর দিনগুলোতে খুব অল্প সংখ্যক ডিভাইস ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত ছিল। এবং এই সকল ডিভাইসগুলো একটি নির্দিষ্ট আইপি অ্যাড্রেস এর মাধ্যমে ইন্টারনেটে তাদের অবস্থান নির্দিষ্ট করত। এবং কেউ যদি সেই কম্পিউটারের কোন ফাইলে এক্সেস নিতে চাইত তাহলে সেই নির্দিষ্ট আইপি অ্যাড্রেস এর মাধ্যমে করতে পারতো। 

বর্তমানে যেহেতু ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত ডিভাইসের পরিমাণ অনেক বেশি তাই আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে ইন্টারনেট ব্রাউজ করা প্রায় অসম্ভব। আর এই সমস্যার সমাধান করতেই ডিএনএস বা ডোমেইন নেম সিস্টেম এর উৎপত্তি।

সুতরাং বুঝতেই পারছেন যে ডিএনএস (DNS) কতটা এবং কেন জরুরি। এছাড়াও ডিএনএর সিস্টেমের মাধ্যমে শুধুমাত্র আইপি এড্রেসই নয়।  বরং, ইন্টারনেটের সাথে সম্পর্কিত  বিভিন্ন ধরনের রেকর্ড বা তথ্য শুধুমাত্র একটি ডোমেইন নেম এর মাধ্যমে বহন করা সম্ভব। 

ডিএনএস কিভাবে কাজ করে ?


ডিএনএস সার্ভার মূলত একটি ফোনবুকের মত কাজ করে থাকে । সাধারণত আপনি যখন কোন ওয়েবসাইটে ভিজিট করেন তখন তার ডোমেইন আপনার ব্রাউজারের এড্রেসবারে লিখে ভিজিট করেন । তবে মনে রাখতে হবে যে আপনি যে ওয়েবসাইটে ভিজিট করবেন সেটা কিন্তু একটি আইপি অ্যাড্রেস এর মাধ্যমে ইন্টারনেটে কানেক্টেড আছে । 

সুতরাং আপনাকে সেই ওয়েবসাইটটিতে ভিজিট করতে হলে   কোনো না কোনো মাধ্যমে অবশ্যই সেই ডোমেইন থেকে আইপি অ্যাড্রেস বের করে আনতে হবে । ঠিক এই কাজটি একটি ডিএনএস সার্ভার করে থাকে। 

ধরুন আপনি যখন আমাদের ওয়েবসাইট techmbr.xyz আপনার ওয়েবসাইটের এড্রেস বারে লিখে ভিজিট করেন তখন আপনার কম্পিউটার আমাদের ওয়েবসাইটের আইপি অ্যাড্রেস জানার জন্য আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার ডিএনএ সার্ভারে রিকোয়েস্ট পাঠায় এবং সেখান থেকে আমাদের ওয়েবসাইটের আইপি এড্রেস বের করে সার্ভার থেকে কনটেন্ট ডাউনলোড করে । 

সাধারনত এই প্রক্রিয়াটি খুবই দ্রুতগতির সাথে সম্পন্ন হয়ে থাকে। তবে আপনি যদি মনে করেন যে আপনার ব্রাউজারটি একটি ওয়েবসাইটের সাথে কানেক্ট হতে হবে বেশি সময় নিচ্ছে অথবা আপনি আরো দ্রুতগতির এবং নিরাপদ ডিএনএস সার্ভার ব্যবহার করতে চান তাহলে খুব সহজেই তা আপনার ডিএনএস সার্ভার পরিবর্তন করার মাধ্যমে করতে পারবেন। 

ডি এনএস ক্যাশিং কি?

ডিএনএস ক্যাশিং হচ্ছে এক ধরনের পদ্ধতি যার মাধ্যমে পূর্বে ভিজিট করা ওয়েবসাইটগুলোর আইপি অ্যাড্রেস এবং অন্যান্য ডোমেইন সম্পর্কিত তথ্যসমূহ আপনার লোকাল কম্পিউটার স্টোর করে রাখা হয়। ডিএনএস ক্যাশিং এর মাধ্যমে আপনার কম্পিউটার ডিএনএস সার্ভার এর কাছে একাধিকবার রিকোয়েস্ট করা এড়িয়ে যেতে পারে। এবং পূর্বে ভিজিট করা ওয়েবসাইট সমূহ খুব দ্রুততার সাথে লোড করতে পারে। 

যেহেতু ডিএনএ সিস্টেমের মাধ্যমে একটি ডোমেইন থেকে আইপি অ্যাড্রেস বের করে আনা একটি সময়সাপেক্ষ কাজ।  তাই সময় বাঁচানোর জন্য আপনার কম্পিউটার এবং প্রাথমিক ডিএনএস সার্ভার অথাৎ রিকার্সিভ ডিএনএস নেম সার্ভার এই দুটি রিকোয়েস্ট সমূহকে ক্যাশ করে রাখে।  যাতে করে পরবর্তী সময়ে যদি আপনি ক্যাশে থাকা কোন ডোমেইন আপনার ব্রাউজারের এড্রেসবারে লিখে ভিজিট করলে আইপি অ্যাড্রেস ক্যাশ থেকে খুব সহজেই বের করা যায়। 

একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন, যে আপনি যখন পূর্বে ভিজিট করা কোন ওয়েবসাইটে পুনরায় ভিজিট করতে যান তখন পূর্বের তুলনায় খুবই অল্প সময়ের মধ্যেই সেই ওয়েবসাইটটি আপনার ব্রাউজারের লোড হয়ে যায়। আর এর পেছনে অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে আপনার কম্পিউটার সেই ওয়েবসাইটটির আইপি অ্যাড্রেস ডিএনএস ক্যাসে সংরক্ষণ করে রেখেছিল। 

ডিএনএস ক্যাশ কিভাবে পরিষ্কার করবেন? 

সাধারণত ডিএনএস ক্যাশ পরিষ্কার করার প্রয়োজন হয় না। কেননা ডিএনএস ক্যাশ বেশিরভাগ সময়ই সঠিক ভাবে কাজ করে। তবে আপনি সম্প্রতি ভিজিট করেছেন এমন কোন ওয়েবসাইটের আইপি অ্যাড্রেস যদি সেই ওয়েবসাইটের কর্তৃপক্ষ পরিবর্তন করে তবে সে ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে আপনার সমস্যা হতে পারে। 

কারণ পরবর্তীতে যখন সেই ওয়েবসাইটে ভিজিট করার চেষ্টা করবেন তখন আপনার ব্রাউজার ডিএনএস ক্যাশ থেকে পূর্বের আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করে সে ওয়েবসাইটে ভিজিট করার চেষ্টা করবে। আর যেহেতু ওয়েব সাইট কর্তৃপক্ষ সে ওয়েবসাইটের আইপি অ্যাড্রেস পরিবর্তন করেছে তাই স্বাভাবিকভাবে আপনি সে ওয়েবসাইটটিতে আর প্রবেশ করতে পারবেন না। 

তবে এই সমস্যাটি আপনি ডিএনএস ক্যাশ পরিষ্কার করার মাধ্যমে খুব সহজে সমাধান করতে পারবেন। ডিএনএস ক্যাশ পরিষ্কার করতে আপনার কম্পিউটার থেকে কমান্ড প্রম্পট (CMD) ওপেন করে নিম্নলিখিত কোনটি লিখে এন্টার চাপুন:

ডিএনএস ক্যাশ পরিষ্কার করার কমান্ড:

ipconfig/flushdns

ডিএনএস স্পুফিং বা ক্যাশ পয়জনিং কি?

ডিএনএস স্পুফিং বা ক্যাশ পয়জনিং মুলত হ্যাকারদের দ্বারা ব্যবহার করা এক ধরনের হ্যাকিং মেথড যা আপনার কম্পিউটারের ডিএনএস ক্যাশ কে পরিবর্তন করে। এ পদ্ধতিতে হ্যাকাররা এক ধরনের ম্যালওয়্যার আপনার কম্পিউটারে ঢুকিয়ে দেয় এবং এবং যার মাধ্যমে আপনার কম্পিউটারের ডিএনএস ক্রাশকে তারা ইচ্ছামত তাদের স্বার্থ অনুযায়ী পরিবর্তন করে। 

আপনি যদি কখন আপনার পরিচিত ওয়েবসাইটে ঢোকার পর পুরো সন্দেহজনক ইন্টারফেস লক্ষ্য করেন তাহলে বুঝতে হবে যে আপনি ডিএনএস পয়জনিং এর শিকার। এক্ষেত্রে আপনার উচিত হবে তৎক্ষণাৎ সেই ওয়েবসাইট থেকে বেরিয়ে আসা এবং আপনার কম্পিউটারের ডিএনএস ক্যাশ পরিষ্কার করা। 

শেষ কথা ...

তো বন্ধুরা এই ছিল ডিএনএস নিয়ে একটি শীর্ষস্থানীয় আলোচনা। ডিএনএস মূলত ডোমেইনকে ট্রান্সলেট করার কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। এবং এটার মাধ্যমে খুব সহজেই আমরা একটি human-readable ইউআরএল ব্যবহার করে ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে ।

সকল প্রযুক্তির কোনো-না-কোনো রয়েছে অন্যান্য প্রযুক্তির মতই ডিএনএ সম্পর্কে আমাদের সম্যক জ্ঞান অর্জন করে সতর্কতার সাথে এটি ব্যবহার করা উচিত। ইন্টারনেট সম্পর্কিত যেকোন বিষয়ে জানতে আগ্রহী হলে আমাদের কমেন্টে জানাতে পারেন একটা পরবর্তী পোস্টে সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব । 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url