ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করার নিয়ম | Flexiload business in BD


আসসালামু আলাইকু বন্ধুরা আশা করি সবাই ভাল আছেন। বর্তমানে ফ্লেক্সিলোড দেওয়া একটি জনপ্রিয় ব্যাবসা। আর আপনিও যদি আপনার মুল ব্যাবসার পাশাপাশি অথবা ছাত্রজীবনে ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসা করতে চান তাহলে আজকের এই পোস্ট টি আপনার জন্য অনেক উপকারী হতে যাচ্ছে। আজকের এই পোস্টে আমি আপনাদের জানাব ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসা করতে কি কি লাগে এবং ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসার নিয়ম কি। 

যেহেতু আপনি এই পোস্টটি পরছেন তো আমি নিশ্চিত ভাবেই বলতে পারি যে আপনি অবশই জানেন যে ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসা কি। তবুও আমি আপনাদের সুবিধার জন্যে বলে দিচ্ছি। ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসা হল অন্যের  মোবাইলে টাকা লোড করে দেওয়া এবং তার বিনিময়ে কোম্পানির কাছ থেকে একটা কমিশন গ্রহণ করা। 

আপনি যদি অল্প খরচে কোন ব্যবসা করতে চান তাহলে ফ্লেক্সিলোড আপনার জন্য উপযুক্ত একটি ব্যাবসা। এই ব্যাবসায় তেমন মূলধনের প্রয়োজন হয়না এবং তুলনামূলক ঝুঁকিও কম। আর ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসা করতে আপনাকে আলাদাভাবে সময়ও বের করতে হবে না। 

আমাদের মধ্যে অনেকেই ছাত্র আছি যাদের মোটামুটি একটা ফ্রেন্ড সার্কেল আছে এবং সকলেই মোবাইল ব্যবহার করে । সুতরাং আপনি যদি ছাত্র/ছাত্রী হয়ে থাকেন তাহলে নিজেদের পরিচিতদের কাছেই ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতে পারবেন। এবং যখন সবাই জানতে পারবে যে আপনার কাছে ফ্লেক্সিলোডের সিম আছে তখন এমনিতেই আপনার সেল বাড়বে। 

আবার আমাদের মধ্যে অনেকেই আছি যারা বর্তমানে একটা ব্যাবসার সাথে জরিয়ে আছি এবং একটা সাইড বিজনেস হিসাবে ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতে চাচ্ছি। এখানে আপনার যদি একটা ব্যাবসা অলরেডি রানিং থাকে তাহলে আপনার খরিদ্দারও নিশ্চয় আছে এবং তাদের মোবাইলও অবশ্যই থাকবেই। সুতরাং আপনার ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসার খরিদ্দারেরও আর অভাব থাকল না। আপনাকে শুধু তাদের জানিয়ে দিতে হবে যে আপনি ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসা করছেন। 

ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করার নিয়ম এবং উপকরণ সমূহ | What you need to start a Flexiload business

ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করা  মূলত খুবই সহজ একটি কাজ। সর্বপ্রথম আপনাকে একটি রিটেইল সিম কোনতে হবে। আপনি যে অপারেটর এর রিটেইল সিম কিনতে চান সেই অপারেটর এর এস আর এর সাথে যোগাযোগ করে একটি রেতাইল সিম কিনতে পারবেন। এরপর আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা আপনার সিমে লোড করে নিতে হবে। এবং সর্বশেষ যে কাজটি করতে হবে তা হল কাস্টমার এর মোবাইল এ ফ্লেক্সিলোড দেওয়া। 

সাধারণত উপরোক্ত নিয়মেই ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা করতে হয়। তবে ফ্লেক্সিলোডের সিম কেনা থেকে শুরু করে সিমের দাম এবং কমিশন কেমন পাওয়া যায় তা জানার বিষয় আছে। তাই আমি নিম্নে এই বিষয় এ বিস্তারিত আলোচনা করেছি।  

ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসা করতে কি কি লাগে? 

ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসার প্রধান উপকরণ হল রিটেইলার সিম এবং একটি মোবাইল ফোন। তবে সঠিকভাবে করতে হলে অবশ্যই আপনার একটি দোকান থাকতে হবে। এবং যেহেতু বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় পাঁচটি মোবাইল অপারেটর আছে এবং প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা সিম এবং ফ্লেক্সিলোডের পদ্ধতি।  সুতরাং আপনার উচিত প্রতিটি অপারেটর এর জন্যেই আলাদা আলাদা রিটেইল সিম কেনা। 

আর আপনি যদি প্রথমেই খুব বেশি ইনভেস্ট না করতে চান তাহলে আপনার উচিত আপনার এলাকায় যে অপারেটর সবচেয়ে জনপ্রিয় সেই অপারেটরের রিটেইল সিম ক্রয় করা এবং স্বল্প পরিসরে ব্যবসা শুরু করা।  যদিও ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসা করতে তেমন কিছু লাগে না তবে রিটেইল সিম কিনতে কিছু কাগজপত্রের প্রয়োজন হবে। 

ফ্লেক্সিলোডের সিম কিনতে কি কি লাগে? 

ফ্লেক্সিলোডের সিম মূলত একটি রিটেইল সিম এবং কোন অপারেটর একটি রিটেইল সিম কখনই সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করবে না। তাই আপনি যদি একটা রিটেইল সিম কিনতে চান তাহলে আপনাকে কয়েকটি নথিপত্র তাদের দেখাতে হবে। এই কাগজগুলো কীভাবে সংগ্রহ করবেন তা নিচে আলোচনা করা হল। 

ভোটার আইডি কার্ডঃ 

প্রথমেই যে জিনিসটি  লাগবে তা হল আপনার ভোটার আইডি কার্ড। যা আমাদের প্রত্যেকের কাছেই আছে। কিন্তু আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের কম হয় তাহলে আপনার অভিভাবকের এন আইডি কার্ড দিয়েও একটা রিটেইল সিম কিনতে পারবেন। 

ট্রেড লাইসেন্সেঃ 

বর্তমানে প্রতিটি ব্যবসাতেই ট্রেড লাইসেন্স এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। এবং ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসাও এর বাতিক্রম নয়। মূলত আপনি আপনার ইউনিয়ন পরিষদ, অথবা পৌরসভা, অথবা আপনার সিটি কর্পোরেশন এর অফিস থেকে আবেদনের মাধ্যমে একটি ট্রেড লাইসেন্স করে নিতে পারবেন। 

দোকানের কাগজঃ 

দোকানের কাগজ বলতে মূলত আপনি যখন একটা দোকান কারো কাছ থেকে ভাড়া নেন তখন তার একটা হুইল অবশ্যই থাকে। আরে এখানে দোকানের কাগজ বলতে মূলত সেই কাগজকেই বোঝানো হয়েছে। এখন আপনি চাইলে সেই কাগজের একটা কপি অপারেটরকে দিয়ে সিম কিনতে পারবেন। 

কিন্তু আপনি যদি নিজেই সেই দোকানে মালিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনি সেই দোকানের দলিল এর একটা কপি দিয়েও রিটেল সিম কিনতে পারবেন। 

এখন কথা হচ্ছে আপনি যদি একজন ছাত্র হয়ে থাকেন তাহলে আপনার পরিচিত কারো কাগজপত্র দিয়ে সিম ক্রয় করতে পারেন।

ফ্লেক্সিলোডের সিম কয়টি? 

সাধারণত একটি অপারেটর এর জন্য একটি ফ্লেক্সিলোডের সিম থাকে। সুতরাং আপনি যদি বাংলাদশের সবগুলো অপারেটর এর ফ্লেক্সিলোড দিতে চান তাহলে আপনাকে প্রতিটি অপারেটর জন্যে আলাদা আলাদা সিম কিনতে হবে। যেহেতু আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে ৫ টি অপারেটর চালু আছে সুতরাং আপনাকে ৫ টি সিম ক্রয় করতে হবে। 

ফ্লেক্সিলোডের সিমের দাম কত? 

মূলত একটি ফ্লেক্সিলোডের সিমের দাম ২০০ টাকা থকে শুরু করে ৮০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে তবে ক্ষেত্র বিশেষে এর থেকে বেশিও হয়ে থাকে। তবে আপনি যখন প্রথমে সিমটা কিনতে যাবেন তখন আপনাকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা লোড করে নিতে হবে। হতে পারে সেটা ২০০০ টাকা আবার সেটা ১০০০০ টাকাও হতে পারে। 

ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসায় লাভ কেমন? 

বাংলাদেশে প্রায় সকল অপারেটর ফ্লেক্সিলোডের কমিশন প্রতি হাজারে ৩০ টাকা। অর্থাৎ আপনি যদি ১ হাজার টাকা লোড করেন তাহলে আপনার সিমে ১০৩০ টাকা পাবেন। পরবর্তীতে আপনি চাইলে সমস্ত টাকাই ফ্লেক্সিলোডের কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। 

ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসায় কমিশন কেমন? 

আসলে প্রতি হজরে ৩০ টাকা কমিশনে তো  ব্যাবসা করা সম্ভব না। আর তাই প্রায় প্রতিটি অপারেটরই কিছু কমিশন এর ব্যাবস্থা থাকে। যেমন ৬০০ টাকা ফ্লেক্সি দিলে ১৪০ টাকা কমিশন পাওয়া যায় আবার ১৯৯ টাকা ফ্লেক্সি দিলে ৪০ টাকা কমিশন পাওয়া যায়। এছাড়াও প্রায় সবসময়ই কোন না কোন অফার চলতেই থাকে। আর কখন কোন অফার চলছে তা আপনি কোম্পানির লোকের কাছ থেকেই জানতে পারবেন। 

ফ্লেক্সিলোডের টার্গেট কত? 

বর্তমানে বাংলাদেশে যে সমস্ত অপারেটর আছে তাদের ধরা বাধা কোন নিয়ম নেই যে একদিনে কত পরিমাণ ফ্লেক্সিলোড দিতে হবে। সুতরাং ফ্লেক্সিলোডের কোন টার্গেট নেই। তবে অনেকসময় অনেক ধরনের ক্যাম্পেইন চলে যেখানে উল্লেখ থাকে যে এই পরিমাণ টার্গেট পুড়ন করতে পারলে আপনাকে এত টাকা বনাস দেওয়া হবে। 

ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসার ব্যাপারে আমার মন্তব্য 

দেখুন ফ্লেক্সিলোডের ব্যাবসা আপনার জন্য একটা ভাল পার্ট টাইম জব হতে পারে। তবে আপনি কখনই এটাকে আপনার প্রধান কাজ হিসাবে গ্রহণ করতে পারবেন না। এছাড়াও যাদের একটা ব্যাবসা চালু আছে তারা চাইলেই এই ব্যাবসা করতে পারেন এছাড়াও যারা ছাত্র আছেন তারাও করতে পারেন। 

আর যেহেতু বর্তমানে সব জায়গাতেই প্রতারকের অভাব নেই তাই যাই করেন না কেন একটু সতর্কতার সাথে করবেন। ধন্যবাদ! 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url